মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
প্রতিনিধি আবশ্যক: অনলাইন পত্রিকা আমার সুরমা ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হবে। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন : ০১৭১৮-৬৮১২৮১, ০১৭৯৮-৬৭৬৩০১
ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধের প্রতিবাদে মুসল্লিদের ‘আইইউবিএটি’ ঘেরাও, সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত

ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধের প্রতিবাদে মুসল্লিদের ‘আইইউবিএটি’ ঘেরাও, সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত

আমার সুরমা ডটকম : ছাত্র-ছাত্রীদের ধর্মীয় পোশাক পরিধান নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে উত্তরায় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) ঘেরাও, বিক্ষোভ সমাবেশ, সড়ক অবরোধ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ভাঙচুর করেছে মুসল্লিরা। বিক্ষোভ চলাকালে টঙ্গী ও বৃহত্তর উত্তরা এলাকার সহস্রাধিক মুসল্লি অংশ নেন। বিক্ষোভকারীরা আইইউবিএটির ভিসি আলিমুল্লাহ মিয়ানকে গ্রেফতারের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। এসময় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করছিলেন। মুসল্লিদের বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মুসল্লিরা বিশ্ববিদ্যালয়টি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এতে প্রায় পাঁচ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী আটকে পড়েন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাইরে বের হলেই তাদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অর্ধশতাধিক রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বেলা ২টার দিকে তুরাগের সুবহানিয়া মাদরাসার মুফতি ও মুহাদ্দিস মুফতি মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে সহস্রাধিক মুসল্লি আইইউবিএটি ফটকে অবস্থান নেন। এসময় টঙ্গী দারুল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মাসউদুল করীম, দক্ষিণখান গাওয়াইর ইসলামিয়া মাদরাসার মুফতি ও সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি জহির ইবনে মুসলিম, বিমানবন্দর বাবুস সালাম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আনিসুর রহমান, দক্ষিণখান আশ্রাফিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি শহীদুল্লাহ, মাওলানা আব্দুল আলীম নেজামীসহ কয়েকটি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও মুসল্লিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ থেকে ১৫টি বাস ও একটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে।
এঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। মুসল্লিদের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক শায়খ ইমরান আকন্দ শুভসহ পাঁচজন শিক্ষক ও প্রায় ২০জন শিক্ষার্থী আহত হন। এসময় পুলিশের রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপে প্রায় ৪০ জন বিক্ষাভকারী আহত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ জানান, দুপুরে তাদের ক্লাস চলছিল। বেলা ২টার দিকে বাইরে থেকে বিক্ষোভের শব্দ শুনে বাইরে এসে মুসল্লিরা বিক্ষোভ করতে দেখেন। এসময় বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ থেকে ১৫টি বাস ভাঙচুর করে।  এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভকারীদের বাঁধা দিলে মুসল্লিদের হামলায় তারা আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করলে আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে মুসল্লিরা। একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে।
পুলিশ সূত্র জানায়, বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ভাঙচুর করে রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এসময় পুলিশ রাস্তা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে নিতে চাইলে তারা পুলিশের উপর চড়াও হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও অর্ধশতাধিক টিয়ারসেল নিক্ষেপ করা হয়। পরে সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেয়। বিক্ষোভকারীরা জানায়, ভিসি আলিমুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ধর্মীয় পোশাক পড়তে নিষেধ করেছেন। সম্প্রতি ধর্মীয় পোশাক পরিহিত অবস্থায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে আসলে তাদেরকে পরীক্ষা দিতে দেননি ভিসি। তিনি এ দেশকে ইউরোপ-আমেরিকার মত ধর্মহীন বানাতে চান। তাদের এ দিবা স্বপ্ন আদৌ বাস্তবায়ন হবে না। বিক্ষোভকারীরা ভিসি আলিমুল্লাহকে অবিলম্বে অপসারণ ও গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদাদের দাবি জানায়। আর ধর্মীয় পোশাকের ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে হয়রানীর শিকার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নির্বিঘ্নে পড়ালেখার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তারা। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও-অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, আইইউবিএটি-এর ভিসি আলিমুল্লাহ মিয়ান শিক্ষার্থীদের বোরকা, নিকাব, পাঞ্জাবী, পায়জামা, টুপি পাগড়ি পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে নিষেধ ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বাধা দেন। এছাড়া ধর্মীয় পোশাক পরিহিত ছাত্রছাত্রীদের ফেল করানোর নির্দেশ দেন বলেও দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। ভিসির এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইতোপূর্বে ক্যাম্পাসের সামনে টঙ্গী-আশুলিয়া সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। পরে বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও স্থানীয় মুসল্লিরাও আন্দোলনে অংশ নেন। এব্যাপারে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলি হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীদের এক পক্ষ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে শুরু করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা ঢিল ছোড়া শুরু করলে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। এরপর বিকাল ৫টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় বলে জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2017-2019 AmarSurma.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com